বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান। যিনি জীবদ্দশাতেই বাংলাদেশের অন্যতম একজন কবি হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছিলেন। আজ তার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের আজকের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা পঞ্চাশের দশকে শামসুর রহমান আধুনিক কবি হিসেবে বাংলা কবিতায় আবির্ভূত হন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশের পরপরই তিনি সচেতন পাঠকমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার পরের গ্রন্থগুলোও আকৃষ্ট করে পাঠকদের। তার ‘আসাদের শার্ট’ কবিতায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান যেন সচিত্র রূপ পায়।
মাহান মুক্তিযুদ্ধেও তার সাহিত্যকর্মে ফুটে উঠেছিল দেশ ও দশের কথা। সেসময় ৭১ সালের এসময় তিনি সপরিবার ছিলেন গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখেন ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’সহ বেশকিছু কবিতা। তার ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি যেন সন্তের মন্ত্রোচ্চারণের মতো অনিবার্য, আবহমান বাংলার সাধারণ জীবনের মতো স্বাচ্ছন্দ্য।
দেশের সাম্প্রদায়িক সকল শক্তির উৎখাতে কবি কলম চালিয়েছেন। কবি লিখেছেন সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কবি চেয়েছেন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনিমার্ণের।
শামসুর রাহমানের ষাটের বেশি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়ও শিশুতোষ, অনুবাদ, ছোটগল্প, উপন্যাস, আত্মস্মৃতি, প্রবন্ধ-নিবন্ধের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
সাংবাদিক হিসেবে কবি শামসুর রাহমান ১৯৫৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর তিনি অধুনা নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শামসুর রাহমান আদমজি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্ম নেওয়া এই কবিকে তার ইচ্ছানুযায়ী ঢাকার বনানী কবরস্থানে, মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
কবির ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া স্মরণসভা, কবিতা আবৃত্তিসহ নানা কর্মসূচিতে কবিকে স্মরণ করছে নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।